নয়া রাষ্টকল্প

আমরা বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সন্ধিক্ষণের সূত্রপাত। এই অভ্যুত্থান একদিকে যেমন দেশের মানুষের মুক্তাকাঙ্ক্ষার জানান দেয়, অন্যদিকে জানান দেয়, এই রাষ্ট্র এখনো কীভাবে উপনিবেশের উত্তরাধিকার বহনের মধ্য দিয়ে নিষ্পেষক রাষ্ট্র হিসেবে হাজির রয়েছে।

ঔপনিবেশিক শাসকরা এই অঞ্চলের মানুষকে শুধু শোষণই করেনি, তাদের নূন্যতম মানবিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে। এই বঞ্চিত করার মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষ যেভাবে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিকভাবে অবমূল্যায়িত হয়েছে, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও সেই একই প্রক্রিয়া জারি রেখেছে এই দেশের স্বৈরশাসকরা। যেমন স্বাধীন মতপ্রকাশের টুঁটি চেপে ধরা, রাজনৈতিকভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হতে বাধা দেয়, যখন তখন কাউকে আটক করা, গুম কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যা। এমন সব অবমূল্যায়নের প্রক্রিয়াকেই বলা যেতে পারে বিমানবায়ন। অর্থাৎ মানুষের জীবনের যে স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ তা থেকে তাকে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে বিমানবায়ন। এই প্রক্রিয়া সবচাইতে ভালো বোঝা যায় যখন ২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় এ দেশের একজন পুলিশ অফিসার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলে, ‘গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না।’ এদেশের মানুষকে বিমানবে পরিণত করার প্রক্রিয়া এবং সম্পদ লুট করে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরতান্ত্রিক ধারা এককালের ঔপনিবেশিক শাসনেরই ধারাবাহিকতা।

এদেশের মানুষ ১৯৬৯-এ চেয়েছিলো স্বায়ত্তশাসন, ১৯৭১-এ স্বাধীনতা, ১৯৯০-এ গণতন্ত্রায়ন, এবং সর্বশেষ ২০২৪-এ বিমানবায়ন থেকে মুক্তি। তবে অতীতের কোনো গণঅভ্যুত্থানই না লুণ্ঠনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে; না পেরেছে বিমানবায়ন প্রক্রিয়াকে থামাতে। এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ রাষ্ট্রকল্পের অভাব। অভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপান্তর করতে রাষ্ট্রকল্পের বিকল্প নেই। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা পুনরায় লক্ষ্য করছি হাজারো শহিদের আত্মত্যাগ বৃথা হতে চলেছে। এখনো জনপরিসরে আলাপ আটকে আছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা প্রদানে নতুন সংবিধান প্রয়োজন কি-না এমনতর প্রশ্নে। শুধুমাত্র সংবিধানের বৈপ্লবিক সংশোধনের মধ্যমেই ন্যায্য ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নয়া রাষ্ট্রকাঠামো ও রাজনৈতিক সমঝোতা। আমাদের নয়া রাষ্ট্রকল্পে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা কীভাবে বিমানবায়ন প্রক্রিয়া জারি রেখেছে এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়।

নয়া রাষ্ট্রকল্পের প্রথম আয়োজন হয় ১ ও ২ জানুয়ারি, ২০২৫ চৈতন্য প্রকাশনীর আয়োজনে সিলেটে এবং রাষ্ট্রজনের কথা প্লাটফর্মের আয়োজনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিউপনিবেশিত রাষ্ট্রের অধিনীতি: বিমানবের মানবায়ন
বক্তা: সৈয়দ নিজার

বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিমানবায়নের স্বরূপ
বক্তা: সহুল আমহদ

পুলিশের সংস্কার প্রশ্ন: নিরাপত্তা সেবা বাহিনী
বক্তা: সামজীর আহমেদ

শিক্ষার বিউপনিবেশায়ন
বক্তা: মনিরুল ইসলাম

বিউপনিবেশিত রাষ্ট্রে লিঙ্গ প্রশ্ন
বক্তা: স্নিগ্ধা রেজওয়ানা

পরিচয়-উত্তর রাজনীতি
বক্তা: ইমরান কামাল

Scroll to Top